শুধু পাহাড়ে নয়, কোথাও হওয়া উচিত নয়: খাগড়াছড়ির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ মিতুল মারমার
বাংলাদেশ ফুটবল দলের তরুণ গোলকিপার মিতুল মারমা সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ঘটনাকে ঘিরে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, “শুধু পাহাড়ে নয়, বাংলাদেশের কোনো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা হওয়া উচিত নয়।” জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায়ও তিনি একই কথা পুনরায় বলেন।
খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি এক পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ি সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ, ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া এবং সহিংসতায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। স্থানীয় একটি পক্ষও এ ঘটনায় যুক্ত হয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে রাঙামাটি থেকে উঠে আসা জাতীয় দলের গোলকিপার মিতুল মারমা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমি জাতীয় দলে এসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলেই দেশের জন্য ভালো হবে, সবার জন্য ভালো হবে।”
মিতুল তাঁর ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন—
“খাগড়াছড়িতে এক জুম্ম পাহাড়ি শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর প্রতিবাদে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সুন্দর সম্প্রীতির পাহাড় আজ অশান্ত দাবানলে জ্বলছে। অথচ সত্য হলো, আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এই দেশ আমার, আপনার, সবার। শুধু পাহাড় নয়, পুরো দেশেই আমরা ধর্ষণ, সহিংসতা, মারামারি কিংবা অন্যায় চাই না।”
তিনি ধর্ষণের শিকার নারীদের মায়ের মর্যাদা দিয়েছেন। মিতুল লিখেছেন, “যাঁরা ধর্ষণের শিকার হন, তাঁরা আসলে আমাদেরই মা কিংবা বোন। তাই এখনই সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।”
পাহাড়ের অস্থিরতা আর খেলোয়াড়ের মানবিক অবস্থান
জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সাধারণত খেলার ময়দান নিয়েই কথা বলেন। কিন্তু খাগড়াছড়ির ঘটনায় মিতুল মারমার বক্তব্য আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কারণ তিনি নিজে পাহাড়ি অঞ্চলের সন্তান। পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তিনি বড় হয়েছেন। তাই এ ধরনের সহিংসতা তাঁকে ব্যথিত করেছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা চাই না অশান্তি। আমরা চাই ন্যায়বিচার, শান্তি আর নিরাপদ বাংলাদেশ।” এই বক্তব্য শুধু একজন ফুটবলারের নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিকেরও।
অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্যের আহ্বান
বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর প্রতিবাদে নানা সময় আন্দোলন হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন মিতুল মারমা। তাঁর আহ্বান—
“আসুন, ধর্ষণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হই এবং একসঙ্গে গড়ে তুলি একটি সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশ।”
তিনি বিশ্বাস করেন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনলে সমাজে অন্যায় আরও বাড়বে। তাই শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
ফুটবলের মাঠ থেকে শান্তির বার্তা
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে যখন জাতীয় দল মাঠে নেমেছে, তখনই এই বক্তব্য এসেছে মিতুল মারমার কাছ থেকে। তিনি মনে করেন, একজন খেলোয়াড়ের দায়িত্ব শুধু খেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও রয়েছে। তাঁর ফেসবুক পোস্ট ও মন্তব্য সেই দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
ফুটবল মাঠে লড়াই করার পাশাপাশি মাঠের বাইরেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছেন। এতে ফুটবলপ্রেমী তরুণদের মধ্যেও সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে পড়বে।
পাহাড়ে শান্তি, দেশে শান্তি
খাগড়াছড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সবার জন্যই উদ্বেগজনক। পাহাড় সবসময় শান্তি, সম্প্রীতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। অথচ একটি ঘটনার জেরে আজ সেখানে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
মিতুল মারমা পাহাড়ের সন্তান হিসেবেই নয়, জাতীয় দলের একজন প্রতিনিধি হিসেবেও শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তাঁর মতে, “আমরা সবাই বাংলাদেশি। এই দেশ আমাদের সবার। পাহাড় হোক বা সমতল, যেকোনো জায়গায় সহিংসতা ও অপরাধ প্রতিরোধে সবার ঐক্য জরুরি।”
উপসংহার
মিতুল মারমার বক্তব্য আজকের বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ধর্ষণ, সহিংসতা কিংবা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা—এসব সমাজের কোনো অংশেই কাম্য নয়। একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড় তাঁর মঞ্চ ব্যবহার করে যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা অনুপ্রেরণাদায়ক।
“আমরা চাই ন্যায়বিচার, শান্তি আর নিরাপদ বাংলাদেশ”—এই আহ্বান শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যদি কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেয়, তবে দেশ সত্যিই হতে পারে সবার জন্য নিরাপদ একটি আবাস।