ইংল্যান্ডকে কোন দিক দিয়ে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ—বললেন হামজা

ইংল্যান্ডকে কোন দিক দিয়ে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ—বললেন হামজা

হৃদয়ের টান যেখানে সবচেয়ে বেশি—হামজা চৌধুরীর চোখে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের জন্য এখন আর হামজা চৌধুরী শুধু এক জন বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় নন। তিনি এখন স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর আবেগের প্রতীক। মাঠে তাঁর দাপুটে উপস্থিতি যেমন অনুপ্রাণিত করে, তেমনি মাঠের বাইরেও তাঁর মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা—ভক্তদের হৃদয়ে জাগায় অন্যরকম গর্ব। সম্প্রতি লেস্টার সিটির অফিশিয়াল অ্যাপে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে ভালোবাসার কথা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন হামজা।

‘‘আমার হৃদয়ের একটা বড় অংশ বাংলাদেশেই পড়ে আছে,’’—এই এক লাইনে যেন ফুটে উঠেছে সবকিছু। নিজের শিকড়, নিজের শৈশব, এবং সেই গ্রামের সরল জীবনযাপনকে যেভাবে তিনি স্মরণ করেন, তা কোনো আনুষ্ঠানিক কথোপকথন নয়, বরং এক গভীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

গ্রামের সেই মুহূর্তগুলো এখনো গেঁথে আছে মনে
হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর রক্তে বইছে বাংলাদেশের ধারা। সেই টানেই প্রথমবার বাংলাদেশে এসে গিয়েছিলেন তাঁর গ্রামের বাড়িতে—যেখানে কেটেছে তাঁর শৈশবের কিছুটা সময়। সেটি ছিল একেবারে প্রান্তিক একটি গ্রাম। কিন্তু গ্রামবাসীর যে আন্তরিকতা, যে ভালোবাসা, সেটি আজও তাঁকে আলোড়িত করে।

“যখন গ্রামের সেই জায়গায় ফিরলাম, মনে হলো আমি কোনো তারকা নয়, আপনজন হয়ে ফিরেছি। অভ্যর্থনাটা এমনই ছিল যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সতীর্থরাও এখনো সেটা নিয়ে কথা বলে। এটা একেবারেই অন্য রকম অভিজ্ঞতা,”—বলেছেন হামজা।

তিনি বলেন, ভালোবাসার যে মাত্রা সেখানে পেয়েছেন, তা কখনো ‘স্বাভাবিক’ মনে হয় না। কারণ, সেটা ছিল নিঃস্বার্থ এবং নিখাদ। কারো কাছ থেকে কিছু চাওয়া নেই, কেবল আন্তরিকতা আর নির্ভেজাল স্নেহ।

ফুটবল নয়, ভালোবাসায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে
হামজা অকপটে স্বীকার করেছেন, খেলাধুলার দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো ইংল্যান্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। কিন্তু মানুষ হিসেবে, একজন খেলোয়াড়কে ভালোবাসা এবং সম্মান জানানোয় বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে। “যুক্তরাজ্যেও মনোযোগ পাই, স্বীকৃতি পাই, কিন্তু বাংলাদেশে যে রকম আন্তরিকতা, সেটা একেবারেই ভিন্ন। সেটা অনুভব না করলে বোঝানো যাবে না।”

এই বক্তব্য শুধু আবেগ নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি এক রকম কৃতজ্ঞতাবোধও প্রকাশ করে। বিশ্ব ফুটবলে যেখানে পরিচিত মুখ হতে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে হামজা বাংলাদেশে খুব অল্প সময়েই হয়ে উঠেছেন এক উজ্জ্বল নাম, কারণ তাঁর প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা ছিল অবিচল।

একটি নাম, একটি সম্ভাবনা
হামজা চৌধুরী এখন কেবল একজন জাতীয় দলের সদস্য নন, তিনি এক নবজাগরণের প্রতীক। তাঁর উপস্থিতি নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের সামনে খুলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চের স্বপ্ন দেখার জানালা। এক সময় যে বাংলাদেশ ফুটবলে শুধু হারের গল্প শুনত, এখন সেখানে আশা জাগানিয়া নাম হামজা।

জাতীয় দলের হয়ে খেলতে যখন দেশে আসেন, তখন রাস্তায়-স্টেডিয়ামে, এমনকি গ্রামগঞ্জেও তাঁর নাম মুখে মুখে ফেরে। মানুষ অপেক্ষা করে তাঁকে এক ঝলক দেখার। এবং সে ভালোবাসার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, তাঁর কৃতজ্ঞতা বারবারই প্রকাশ পাচ্ছে—বক্তব্যে, আচরণে।

ফুটবলের বাইরেও এক দূত
হামজার এই ভূমিকাকে কেবল একজন অ্যাথলেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। তিনি এখন হয়ে উঠেছেন দুই সংস্কৃতির সেতুবন্ধনকারী একজন দূত। তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব যিনি পশ্চিমা পরিপ্রেক্ষিতেও বড় হয়েছেন, আবার পূর্বের শিকড়কে ভুলে যাননি, তিনিই হতে পারেন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের অনন্য মুখ।

শেষ কথায়
“অনেকেই বলতে পারেন এটা আবেগময় শোনায়, কিন্তু আমার হৃদয়ের অনেকটা বাংলাদেশে পড়ে আছে”—হামজার এই কথায় হয়তো কিছুটা নাটকীয়তা আছে, কিন্তু এতে কোনো কৃত্রিমতা নেই। কারণ, তিনি তা প্রমাণ করেছেন তাঁর কাজ, তাঁর কথাবার্তা, এবং তাঁর আচরণে।

একটি দেশের প্রতি এমন ভালোবাসা, যা শুধু পাসপোর্টে লেখা থাকে না—তা যদি কেউ সত্যিকারে ধারণ করে, তাহলে সে ভালোবাসা শুধু বাহবা নয়, বদলেরও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *