ফুটবল বনাম ফুটসাল: পার্থক্য কোথায়?

ফুটবল বনাম ফুটসাল: পার্থক্য কোথায়?

ফুটসাল: ছোট পরিসরে ফুটবলের গতি ও কৌশল

ফুটসাল হলো ফুটবলেরই একটি গতিময় ও কৌশলনির্ভর সংস্করণ, যা ছোট মাঠে কম সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে খেলা হয়। দ্রুত খেলার গতি, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের জন্য এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কীভাবে আলাদা ফুটসাল?
দলপ্রতি খেলোয়াড়: মাঠে থাকে ৫ জন করে খেলোয়াড়। দলে সর্বোচ্চ ১২ জন থাকতে পারে এবং খেলোয়াড় বদলানো যায় যতবার খুশি।মাঠের আকার: ফুটসালের মাঠ ফুটবলের তুলনায় অনেক ছোট—দৈর্ঘ্য ২৭–৪২ গজ, প্রস্থ ১৭–২৭ গজ।

খেলার সময়: মোট ৪০ মিনিটের খেলা, দুই অর্ধে ভাগ করা। প্রতি অর্ধে ২০ মিনিট এবং মাঝখানে বিরতি।

বল: ফুটসালের বল অপেক্ষাকৃত ভারী ও ছোট, যাতে কম বাউন্স হয়। ওজন ৪০০–৪৪০ গ্রাম।

মাঠের পৃষ্ঠ: সাধারণত কৃত্রিম টার্ফ, ভিনাইল বা প্লাস্টিকের তৈরি শক্ত পৃষ্ঠ।

নিয়মের ভিন্নতা
ফুটসালে ফুটবলের মতো থ্রো-ইন নেই, থাকে কিক-ইন।
গোলরক্ষক বল ধরার চার সেকেন্ডের মধ্যে ছাড়তে না পারলে ফ্রি-কিক হয়।
এক অর্ধে কোনো দল যদি ৬টি ফাউল করে, প্রতিপক্ষ পায় একটি পেনাল্টি শট।
পেনাল্টি স্পট থাকে পোস্ট থেকে ৬ মিটার দূরে।

ফুটসাল বিশ্বকাপ
১৯৮৯ সাল থেকে ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পরপর হয় এই আসর।

সবচেয়ে সফল দল: ব্রাজিল (৬ বার চ্যাম্পিয়ন)

এশিয়ায় শীর্ষে: ইরান (১৩ বার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন)

বাংলাদেশে ফুটসাল
বাংলাদেশে ফুটসাল এখনো নবীন একটি খেলা। মূলত করপোরেট ও অ্যামেচার পর্যায়ে এটি বেশি জনপ্রিয়। দেশের কয়েকটি ক্লাব ও একাডেমি ফুটসাল প্রশিক্ষণ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করে থাকে।

জাতীয় দলের সূচনা
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জাতীয় ফুটসাল দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
৬৩০ জন খেলোয়াড়ের মধ্য থেকে ৫৩ জনকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। সেখান থেকে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত হবে ২৪ জন, যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

নির্বাচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ, বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ রক্সিসহ আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ কোচ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ
আগামী সেপ্টেম্বরে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অংশ নেবে বাংলাদেশের জাতীয় পুরুষ ফুটসাল দল।
এ উপলক্ষে ইরানি কোচ সাঈদ খোদারাহমিকে তিন মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে ছেলেদের আগেই আন্তর্জাতিক ফুটসালে পদচারণা করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা—২০১৮ সালে তারা অংশ নেয় এএফসি ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে।

শেষ কথা
ফুটসাল এখন শুধু বিকল্প নয়—নতুন প্রজন্মের কাছে এটি একটি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নাম। দক্ষতা, গতি ও কৌশলের অনন্য সংমিশ্রণে ফুটসাল হয়ে উঠছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের এক আকর্ষণীয় অধ্যায়, যেখানে বাংলাদেশের পদচারণাও শুরু হয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *