এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে ফিরলেন জাদুকর মেসি, রোনালদোর রেকর্ডও ছুঁড়ে ফেললেন পেছনে
এক ম্যাচ গোলহীন থেকে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো মেসির গতি থেমে যাচ্ছে। কিন্তু লিওনেল মেসি বারবার প্রমাণ করে দেন, তিনি শুধু ফুটবল খেলেন না—ফুটবলকে নতুনভাবেนิ সংজ্ঞায়িত করেন। এবারের এমএলএস ম্যাচে নিউইয়র্ক রেড বুলসের বিপক্ষে তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।
মেসির জাদুতে ইন্টার মায়ামির দুরন্ত প্রত্যাবর্তন
গত ম্যাচে সিনসিনাটির বিপক্ষে গোলশূন্য থাকা এবং দলের পরাজয়ের পর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মেসি ও তাঁর দল ইন্টার মায়ামি। কিন্তু রোববার রাতে নিউইয়র্ক রেড বুলসের বিপক্ষে সেই শঙ্কা মুছে দিলেন মেসি নিজ হাতে—জোড়া গোল করলেন, করালেনও এক গোল, এবং তুলে আনলেন ৫-১ গোলের বিশাল জয়।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ১৪ মিনিটেই গোল হজম করে বসে মায়ামি। গোলদাতা ছিলেন রেড বুলসের আলেক্সান্ডার হেক। তবে এরপরই দেখা যায় মেসির পরিচিত ছন্দ। বক্সের বাইরে থেকে চোখধাঁধানো অ্যাসিস্টে জর্দি আলবাকে দিয়ে সমতা ফেরান। তিন রক্ষকের মাঝেও তাঁর পাস ছিল নিখুঁত, সময় ছিল ক্ষণিক, এবং প্রতিপক্ষ হতবাক।
এরপর প্রথমার্ধেই দুই গোল করে দলকে এগিয়ে নেয় তেলাসকো সেগোভিয়া। কিন্তু ম্যাচের আসল রূপ পাওয়া যায় বিরতির পর।
দ্বিতীয়ার্ধে মেসির একক প্রদর্শনী
৬০ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে সের্হিও বুসকেতসের এক চমৎকার থ্রু বল ধরে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে নিখুঁত ফিনিশিং করেন মেসি। এই গোলেই বোঝা যায়, বয়স তাঁর গতি কেড়ে নিতে পারেনি, বরং অভিজ্ঞতায় আরও শানিত করেছেন নিজেকে।
৭৫ মিনিটে আবারও গোল। এবার বাম দিক থেকে বল পেয়ে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে করেন ম্যাচের পঞ্চম ও নিজের দ্বিতীয় গোলটি। রেড বুলসের রক্ষণভাগ যেন হতভম্ব, আর দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
রেকর্ড ভাঙার মেসি
এই ম্যাচেই মেসি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ক্যারিয়ারে তাঁর নন-পেনাল্টি গোল সংখ্যা এখন ৭৬৪—যা কিনা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ৭৬৩ গোলকে ছাড়িয়ে গেছে। উল্লেখ্য, রোনালদোর ৯৩৮ গোলের মধ্যে ৭৬৩টি ছিল পেনাল্টির বাইরে, যা এতদিন ছিল সর্বোচ্চ।
তবে মেসির কৃতিত্ব আরও বেশি কারণ তিনি এই কীর্তি গড়েছেন ১৬৭টি ম্যাচ কম খেলে। এ যেন নিছক রেকর্ড ভাঙা নয়—এটা দক্ষতা, ধারাবাহিকতা ও পরিপক্বতার প্রতিচ্ছবি।
এছাড়াও, মেসি এবার টানা ১৯টি পঞ্জিকাবর্ষে ৩০ বা তার বেশি গোলে সরাসরি অবদান রাখলেন (গোল + অ্যাসিস্ট)। ২০০৭ সালে বার্সেলোনায় শুরু হওয়া এই যাত্রা আজও অব্যাহত পিএসজি ও ইন্টার মায়ামিতে।
পয়েন্ট তালিকায় লড়াই জমজমাট
মায়ামির জয় শুধু মেসির জন্য নয়, দলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ২১ ম্যাচ শেষে ১২ জয়, ৫ ড্র ও ৪ হারে ৪১ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন ইস্টার্ন কনফারেন্সে ৫ম স্থানে। তবে পয়েন্ট তালিকার ওপরে থাকা চারটি দলই মায়ামির চেয়ে ৩টি করে ম্যাচ বেশি খেলেছে, ফলে শীর্ষস্থানে যাওয়ার লড়াই এখনো খোলা।
ন্যাশভিল ২৪ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকলেও মায়ামির সামনে সুযোগ রয়েছে টেবিলের ওপরের স্থান দখলের, যদি তারা এই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে।
শেষ কথা
মেসির খেলায় বারবার উঠে আসে একটি বার্তা—”বয়স শুধুই সংখ্যা”। তিনি শুধু গোল করেন না, তিনি অনুপ্রেরণা তৈরি করেন, রেকর্ড গড়েন এবং ভাঙেন। এবং সর্বোপরি, তিনি ফুটবলকে ভালোবাসেন।
এই ম্যাচ ছিল সেটার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ।