ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী অগ্রগতি: নতুন ওষুধে দ্বিগুণ কার্যকারিতা
প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই মারা যান সময়মতো কার্যকর চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। বিশেষ করে মাথা ও গলার ক্যানসার—এর চিকিৎসা গত দুই দশকে খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা এই ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সম্মেলনে এক গবেষণায় এমন এক ওষুধের কথা জানানো হয়েছে, যা প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি কার্যকর বলে দাবি করছেন গবেষকরা।
গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন ও যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ–এর নেতৃত্বে ২৪টি দেশের ১৯২টি স্থানের ৭১৪ জন রোগী অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ৩৬৩ জনকে নতুন ইমিউনোথেরাপি ওষুধ পেমব্রোলিজুম্যাব দেওয়ার পর প্রচলিত চিকিৎসা (অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি) দেওয়া হয়। বাকি ৩৫১ জনকে কেবল প্রচলিত চিকিৎসাই দেওয়া হয়।
ফলাফল অত্যন্ত চমকপ্রদ। দেখা গেছে, যারা পেমব্রোলিজুম্যাব গ্রহণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ক্যানসার প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে, কেবল প্রচলিত চিকিৎসা দেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ছিল সর্বোচ্চ ৩০ মাস।
এই ওষুধটি রোগীর দেহের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলে এমন একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনকে লক্ষ্য করে কাজ করে, যা ক্যানসার কোষ ধ্বংসে সহায়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিডি-এল১ ইমিউন মার্কার বেশি থাকলে এই থেরাপি আরও বেশি কার্যকর হয়, তবে কম মাত্রাতেও এটি ভালো ফল দিয়েছে।
গবেষণার অন্যতম নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক ড. ডগলাস অ্যাডকিনস বলেন, “এই প্রথম আমরা এমন একটি ওষুধ পেয়েছি যা নতুন রোগীদের ক্ষেত্রেও ব্যাপক কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিশাল অগ্রগতি।”
অন্যদিকে ব্রিটিশ অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন বলেন, “এই থেরাপি ছড়িয়ে পড়া বা পুনরায় ফিরে আসা ক্যানসারে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো নতুন রোগীদের ক্ষেত্রেও এর সাফল্য প্রমাণিত হলো।”
বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও গবেষকরা ইতোমধ্যে এই ওষুধকে মাথা ও গলার ক্যানসারের আধুনিক প্রতিষেধক হিসেবে দেখছেন। অনেক দেশেই এটি পরীক্ষামূলকভাবে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
গবেষণাটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমএসডি (MSD)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন আবিষ্কার ক্যানসার চিকিৎসায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতে এটি অন্যান্য ক্যানসারেও প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়েও চলছে গবেষণা।