চোখের যত্নে আজকের জরুরি করণীয়: প্রযুক্তির যুগে ৫টি কার্যকর নিয়ম
বর্তমান ডিজিটাল যুগে চোখের ওপর চাপ বাড়ছে অভূতপূর্ব হারে। অফিসের কম্পিউটার, বাসায় স্মার্টফোন, ট্যাব, টেলিভিশন—দিনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তেই আমরা কোনো না কোনো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। পেশাগত দায়িত্ব, অনলাইন ক্লাস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা বিনোদন—সব ক্ষেত্রেই চোখ যেন বিশ্রামের সুযোগই পাচ্ছে না। ঘুমের সময় ছাড়া চোখের আর কোনো বিরতি নেই বললেই চলে।
এমন পরিস্থিতিতে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতন হওয়া অপরিহার্য। সময়মতো যত্ন না নিলে চোখের ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা, শুষ্ক চোখ, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই শুধু পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই নয়, জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এনে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
চলুন জেনে নেই চোখের সুস্থতার জন্য ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও তার পেছনের কারণ—
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা—সমস্যা আগেই ধরুন
চোখে কোনো সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করানো উচিত।
কেন জরুরি? অনেক চোখের রোগ (যেমন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, গ্লকোমা) প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ দেখায় না। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সহজেই ধরা পড়ে।
কারা বেশি সতর্ক হবেন? ডায়াবেটিস রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং যারা বেশি সময় স্ক্রিনে কাজ করেন।
পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা—সংক্রমণ থেকে রক্ষা
চোখ একটি সংবেদনশীল অঙ্গ, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
নোংরা হাতে চোখ কচলাবেন না।
অন্যের প্রসাধনী (কাজল, আইলাইনার, মাসকারা) বা তোয়ালে ব্যবহার করবেন না।
দিনের শেষে চোখের মেকআপ সম্পূর্ণভাবে তুলে ফেলুন।
চোখ লাল হওয়া, চুলকানি বা পানি পড়লে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূর্যের রশ্মি ও স্ক্রিনের আলো থেকে সুরক্ষা
সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব: অতিবেগুনি (UV) রশ্মি চোখে পড়লে কর্নিয়া, লেন্স ও রেটিনায় ক্ষতি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ছানি বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে।
প্রতিরোধের উপায়: UV প্রটেকশনযুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
স্ক্রিনের আলো: কম্পিউটার ও মোবাইলের নীল আলো চোখে চাপ বাড়ায়। এজন্য অ্যান্টি-গ্লেয়ার লেন্স বা স্ক্রিন ফিল্টার ব্যবহার করুন।
২০-২০-২০ নিয়ম—চোখকে বিরতি দিন
ডিজিটাল স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা চোখের পেশি ক্লান্ত করে ফেলে।
নিয়ম: প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকান।
অতিরিক্ত টিপস: স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা (brightness) ঠিক রাখুন, ফন্ট সাইজ বড় করুন, এবং কাজের মাঝে ছোট বিরতি নিন।
পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি
চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সুষম খাদ্য অপরিহার্য।
ভিটামিন এ: গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ডিম
ভিটামিন সি: কমলা, পেয়ারা, স্ট্রবেরি
ভিটামিন ই: বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: সামুদ্রিক মাছ
ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক: দুধ, ডাল, শাকসবজি
পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যাতে চোখের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং শুষ্ক চোখের সমস্যা কমে।
অতিরিক্ত কিছু টিপস
ঘুম পর্যাপ্ত নিন—প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা।
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল চোখের ক্ষতি করে—এড়িয়ে চলুন।
কাজের সময় ঘরের আলো পর্যাপ্ত রাখুন।
কম আলো বা অন্ধকারে দীর্ঘসময় মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
শেষ কথা:
চোখ শুধু দৃষ্টি নয়—এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে রঙিন করে তোলে। তাই অল্প যত্ন ও সচেতনতায় আমরা দীর্ঘদিন চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি। মনে রাখবেন, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পর তা ফেরানো কঠিন, কিন্তু সঠিক সময়ে যত্ন নিলে তা রক্ষা করা সম্ভব।