মশার চোখে আপনি এত আকর্ষণীয় কেন? জানুন কারণগুলো

মশার চোখে আপনি এত আকর্ষণীয় কেন? জানুন কারণগুলো

কেন মশা আপনাকেই কামড়ায়? জানুন এই “রক্তলোলুপ” রহস্য

রাতের শান্ত ঘুম বা সন্ধ্যার আড্ডা—দুটোই নষ্ট করে দিতে পারে এক ছোট্ট প্রাণী, নাম তার মশা। যেন ওদের একটাই লক্ষ্য—আপনার রক্তের স্বাদ নেওয়া! আশপাশে অনেক মানুষ থাকা সত্ত্বেও মশা যেন কেমন করে আপনাকেই বেছে নেয়। তাই প্রশ্ন জাগে, মশা কি কাউকে বিশেষভাবে বেশি পছন্দ করে? আর যদি করে, তবে কেন?

চলুন, বিজ্ঞানের আলোয় জেনে নিই মশার এই বাছবিচারভিত্তিক ভালোবাসার রহস্য।

ঘাম মানেই মশার নিমন্ত্রণপত্র

যখন আপনি ব্যায়াম করেন, গরমে ঘেমে যান বা রোদে হাঁটেন, তখন শরীর থেকে বের হয় ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইউরিক অ্যাসিড, আর অ্যামোনিয়া। মশার নাকে এগুলোর গন্ধ মানে একেবারে পাঁচতারা হোটেলের খাবারের সুবাস! এই রাসায়নিকগুলোই ওদের আকর্ষণ করে আপনার দিকে। তাই আপনি যত বেশি ঘামবেন, তত বেশি মশা আপনার আশেপাশে ঘুরবে।

জিনই যদি হয় মশার প্রেমের কারণ

সব দায় কিন্তু আপনার নয়! গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু মানুষের জিন বা বংশগত বৈশিষ্ট্য এমন হয় যে তাঁদের দেহ থেকে নির্দিষ্ট ধরনের গন্ধ বা রাসায়নিক নির্গত হয়, যা মশাকে বিশেষভাবে টানে। অনুমান করা হয়, বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ মশার কাছে “ভিআইপি মেন্যু” হিসেবে বিবেচিত।

নিঃশ্বাসেও লুকিয়ে আছে আহ্বান

আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস থেকেও মশা তার শিকার চিহ্নিত করতে পারে। মশার অ্যান্টেনায় আছে বিশেষ সেন্সর, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড শনাক্ত করে। আপনি যত জোরে বা ঘনঘন শ্বাস ছাড়বেন, মশা তত দ্রুত আপনাকে খুঁজে বের করবে। তাই দৌড়ানো, হাঁটাহাঁটি বা গরমে হাঁপিয়ে ওঠার পর মনে হয় যেন পুরো ঝাঁক আপনাকে ঘিরে ফেলেছে।

রক্তের গ্রুপেও রয়েছে রহস্য

হ্যাঁ, মশারও রক্তের স্বাদের পছন্দ আছে! গবেষণায় জানা গেছে, মশা ‘O’ গ্রুপের রক্তকে অন্য গ্রুপের তুলনায় বেশি পছন্দ করে। ‘A’ গ্রুপের মানুষ তুলনামূলকভাবে একটু নিরাপদ, আর ‘B’ গ্রুপ মাঝামাঝি পর্যায়ে। তাই যদি আপনার রক্তের গ্রুপ ‘O’ হয়, তাহলে মশার কাছে আপনি একেবারে “গুরমে ডিশ”।

গর্ভবতী নারীরা কেন মশার প্রিয়

গর্ভবতী নারীরা সাধারণত কিছুটা বেশি শরীরের তাপ উৎপন্ন করেন এবং বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়েন। এই দুই কারণেই মশা তাঁদের কাছে বেশি আকর্ষণ বোধ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী নারীরা অন্য নারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি মশার কামড়ে ভোগেন।

পোশাকের রংয়েও প্রভাব আছে

মশা উজ্জ্বল বা গাঢ় রঙের পোশাক সহজে শনাক্ত করতে পারে। কালো, লাল, নেভি ব্লু—এসব রং মশার নজরে দ্রুত পড়ে। অন্যদিকে সাদা, হালকা ধূসর, বেইজ বা খাকি রঙের পোশাক কিছুটা “ক্যামোফ্লেজ” দেয়। তাই গরমের দিনে হালকা রঙের পোশাক পরা শুধু আরামদায়ক নয়, মশা থেকেও কিছুটা সুরক্ষা দেয়।

রসুন বা ভিটামিন বি১২—সবই মিথ

অনেকে বিশ্বাস করেন, রসুন খেলে বা ভিটামিন বি১২ খেলে মশা দূরে থাকে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, এসবের কোনো প্রমাণ নেই। মশা মূলত গন্ধ, তাপমাত্রা ও রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে শিকার খুঁজে নেয়—খাবারের নয়।

সবাই সমান কামড় খায় না

মশার কামড়ে কারও তেমন কিছু হয় না, আবার কেউ প্রচণ্ড চুলকানি ও ফুসকুড়িতে ভোগেন। এটা নির্ভর করে শরীর কতটা হিস্টামিন নিঃসরণ করে তার ওপর। কেউ কেউ বেশি সংবেদনশীল, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে কামড়ের প্রতিক্রিয়া অনেক তীব্র হয়।

মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

হালকা রঙের পোশাক পরুন – বিশেষ করে সাদা বা বেইজ রং।
রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন – ঘরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই।
স্থির পানি এড়িয়ে চলুন – এটি মশার প্রজননক্ষেত্র।
বিয়ার ও মিষ্টি পানীয় কমান – এতে শরীর থেকে এমন গন্ধ নির্গত হয় যা মশাকে টানে। ঠান্ডা থাকুন ও কম ঘামুন – শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে মশা আপনাকে দ্রুত খুঁজে পায়।

শেষ কথা

মশা ছোট হলেও তার প্রভাব বিশাল। শুধু চুলকানি নয়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা ম্যালেরিয়ার মতো ভয়াবহ রোগও ছড়ায় এদের মাধ্যমে। তাই মশা প্রতিরোধ মানে কেবল আরাম নয়—এটা একধরনের আত্মরক্ষা।

তাই বলতেই হয়, মশা আপনাকে ভালোবেসে কামড়ায় না—ওটা কেবল বিজ্ঞানসম্মত ক্ষুধা। কিন্তু আপনি যদি সচেতন হন, তবে মশার এই প্রেম একেবারেই ব্যর্থ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *