অল্প বয়সে পরিবারের দায়িত্ব: ‘প্যারেন্টিফিকেশন’ কী এবং এর প্রভাব
শিশু ও কিশোর বয়স জীবনের এক রঙিন সময়—যেখানে খেলাধুলা, পড়াশোনা, বন্ধু আর স্বপ্নের জগৎ প্রাধান্য পায়। কিন্তু সবার জীবন এমন হয় না। কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, যখন পরিবারের বড় দায়িত্ব এসে পড়ে অল্প বয়সী সন্তানের কাঁধে। এই ঘটনাকে মনোবিজ্ঞানে বলা হয় প্যারেন্টিফিকেশন (Parentification)—অর্থাৎ, শিশুর ওপর বাবা-মায়ের মতো দায়িত্ব এসে পড়া।

প্যারেন্টিফিকেশনের ধরন
এ ধরনের পরিস্থিতিতে অল্প বয়সেই করতে হতে পারে—
পরিবারের আয়ের ব্যবস্থা
খাবার ও গৃহস্থালির কাজ সামলানো
ছোট ভাইবোনের লালন-পালন
অসুস্থ বা মানসিকভাবে দুর্বল অভিভাবককে সহায়তা করা
এখানে মনে রাখা জরুরি, যদি শিশুটি বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে থেকে কেবল সহযোগিতামূলক কাজ করে, সেটি প্যারেন্টিফিকেশন নয়। প্যারেন্টিফিকেশন হয় তখনই, যখন বয়সের তুলনায় দায়িত্ব অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং তত্ত্বাবধানের অভাব থাকে।
কেন ঘটে এই পরিস্থিতি
বাবা-মায়ের মৃত্যু
শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা
পারিবারিক ভাঙন বা বিচ্ছেদ
অভিভাবকের দীর্ঘ অনুপস্থিতি (যেমন বিদেশে কাজ করা)
মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
অল্প বয়সে দায়িত্ব নেওয়ার ফলে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা: ক্রমাগত দায়িত্বে থাকায় মন খারাপ, হতাশা ও উদ্বেগ বেড়ে যায়।
শখ-আহ্লাদের মৃত্যু: খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণের সুযোগ কমে যায়।
অতিরিক্ত আত্মত্যাগ: সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় অন্যের খুশির দিকে অতিরিক্ত খেয়াল রাখার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
নিজেকে দোষী মনে করা: পরিবারের কেউ মন খারাপ করলে নিজেকে দায়ী মনে করা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কীভাবে সহায়তা করা যায়
কাছের মানুষ যেন তার ত্যাগকে স্বাভাবিক ধরে না নেয়
সত্যিকারের বন্ধু বা সঙ্গী, যে শুনবে ও মানসিক সমর্থন দেবে
দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া
প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা থেরাপি নেওয়া
শেষকথা
প্যারেন্টিফিকেশন কোনো শিশুর দোষ নয়—এটি পরিস্থিতির ফল। সমাজ, পরিবার ও কাছের মানুষ মিলে যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এমন তরুণরা শুধু দায়িত্বের ভার নয়, জীবনের আনন্দও অনুভব করতে পারবে।