হাঁটুব্যথা কমাতে কালিজিরার তেল: গবেষণায় মিলল চমকপ্রদ ফলাফল
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুব্যথা যেন অনেকের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী এবং কষ্টদায়ক হতে পারে। প্রচলিত চিকিৎসায় নানা ওষুধ ও ইনজেকশনের ব্যবহার থাকলেও এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়। তাই অনেকেই খোঁজ করেন প্রাকৃতিক কোনো বিকল্পের।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এমনই এক প্রাকৃতিক উপাদানের নাম—কালিজিরার তেল। গবেষণায় দেখা গেছে, এই তেল জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে কার্যকর হতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এতে প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধের মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নেই।
গবেষণাটি কী বলছে?
এই গবেষণায় ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মোট ১১৬ জন হাঁটুব্যথায় (অস্টিওআর্থ্রাইটিস) আক্রান্ত রোগীকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একদলকে প্রতিদিন আট ঘণ্টা পরপর ২.৫ মিলিলিটার করে কালিজিরার তেল সেবন করানো হয়, অন্য দলকে কিছুই দেওয়া হয়নি। এক মাসের মাথায় দেখা যায়—
কালিজিরার তেল সেবনকারীদের হাঁটাচলায় উন্নতি হয়েছে ২৭.৭২%
ব্যথা কমেছে গড়ে ৩৩.৯৬%
প্যারাসিটামল সেবনের প্রয়োজন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে
এতে বোঝা যায়, কালিজিরার তেল শুধুই উপসর্গ হ্রাস করে না, বরং দৈনন্দিন চলাফেরাতেও স্বস্তি এনে দিতে পারে।
কালিজিরার উপকারী উপাদান: থাইমোকুইনোন
কালিজিরার মূল শক্তি হলো এতে থাকা থাইমোকুইনোন নামক একটি যৌগ, যা প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, এমনকি কিছু স্নায়বিক সমস্যা কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় থাইমোকুইনোনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাংগাল গুণাবলিও উল্লেখ করা হয়েছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
তবে মনে রাখা জরুরি, কালিজিরা বা এর তেল কোনো রোগের “প্রধান চিকিৎসা” নয়। এটি শুধু একটি সহায়ক উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, আপনার বয়স, শারীরিক অবস্থা ও চলমান ওষুধ অনুযায়ী চিকিৎসকই ঠিক করে দিতে পারবেন এটি আপনার জন্য নিরাপদ কি না।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে, বিশেষ করে যখন এর কার্যকারিতা গবেষণায় প্রমাণিত হয়। কালিজিরার তেল ঠিক তেমনই একটি উপাদান, যা হাঁটুব্যথায় স্বস্তি দিতে পারে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা ছাড়াই। তবে সচেতন ব্যবহারের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবার জন্যই নিরাপদ পথ।