অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে? হতে পারে আপনার শরীর কোনো রোগের সংকেত দিচ্ছে!
আমরা যখন গরমে থাকি বা শারীরিক পরিশ্রম করি, তখন ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। এটি শরীরের স্বাভাবিক কুলিং সিস্টেম। কিন্তু আপনি যদি মাঝেমাঝেই বা হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক রকমের ঘামতে শুরু করেন—তবে সেটি হতে পারে অন্য কোনো রোগের লক্ষণ। আজকের আলোচনায় জেনে নিন অতিরিক্ত ঘামের পেছনে লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো।
ঘাম — সবসময় স্বাভাবিক নয়
একই পরিবেশে সবাই একইভাবে ঘামে না। কারও ঘামগ্রন্থি বেশি সক্রিয়, কেউ আবার তুলনামূলক কম ঘামে। কিন্তু কেউ যদি ঘরেই বসে থাকেন, আবারও অতিরিক্ত ঘামতে থাকেন—তাহলে সেটা হয়তো সাধারণ নয়।
অতিরিক্ত ঘাম, যার কোনও সুস্পষ্ট কারণ নেই, সেটা হতে পারে শরীরের নীরব সংকেত। চলুন জেনে নিই, ঠিক কোন কোন রোগে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের পেছনে লুকিয়ে থাকা ৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা
হাইপারহাইড্রোসিস: শরীরের ঘামগ্রন্থির অতিসক্রিয়তা
এই অবস্থায় শরীরের ঘামগ্রন্থিগুলো এতটাই সক্রিয় হয়ে ওঠে যে, সামান্য উত্তেজনা, গরম বা দুশ্চিন্তাতেও প্রচণ্ড ঘাম হয়—বিশেষত হাত, পা বা বগলে।
চিকিৎসা: অনেক সময় এটি নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ঘাম জীবনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত করলে লোশন, অ্যান্টিপারস্পির্যান্ট, বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
থাইরোটক্সিকসিস: থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ
থাইরয়েড গ্রন্থি যদি অতিরিক্ত হরমোন তৈরি করে, তখন শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বেড়ে যায়। এর ফলেই ঘাম, বুক ধড়ফড়, ওজন হ্রাস, ও গলার সামনের অংশ ফুলে যাওয়া দেখা দেয়।
করণীয়: হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
পোস্টমেনোপজাল সিনড্রোম: নারীদের হরমোন পরিবর্তনজনিত ঘাম
মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে অতিরিক্ত ঘাম, গরম ভাপ, ক্লান্তি, ঘুমের ব্যাঘাত ও মানসিক অবসাদ দেখা যায়।
চিকিৎসা: হরমোন থেরাপি বা কিছু বিকল্প ওষুধের মাধ্যমে উপসর্গ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া
বিশেষত ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা ওষুধের কারণে রক্তের গ্লুকোজ হঠাৎ নেমে যেতে পারে। এর ফলে হঠাৎ ঘাম, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা ও বুক ধড়ফড় দেখা দেয়।
জরুরি করণীয়: অবিলম্বে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কিছু খাওয়ান।
হার্ট অ্যাটাক: শুধু বুক ব্যথা নয়, ঘামও হতে পারে লক্ষণ
অনেক সময় ডায়াবেটিক রোগীদের হার্ট অ্যাটাক হয় নিরব উপসর্গে। হঠাৎ প্রচণ্ড ঘাম, বমিভাব, অসস্তিবোধ—সবই হতে পারে হৃদ্রোগের লক্ষণ।
করণীয়: সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যান।
ফিওক্রোমোসাইটোমা: একটি বিরল টিউমার
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির এই টিউমার হঠাৎ করে শরীরে হরমোনের বিস্ফোরণ ঘটায়। কয়েক মিনিটের জন্য তীব্র ঘাম, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, বমি ও বুক ধড়ফড় হতে পারে।
লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, মাইগ্রেনের ওষুধ, স্টেরয়েড কিংবা পেইনকিলারও অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কখন সতর্ক হবেন?
ঘামের সঙ্গে বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা থাকলে
ওজন কমে যাচ্ছে, গলা ফুলে যাচ্ছে
রক্তচাপ বা সুগার ওঠানামা করছে
রোজকার কাজ ঘামের জন্য ব্যাহত হচ্ছে
করণীয়:
নিয়মিত রক্তচাপ, সুগার ও থাইরয়েড পরীক্ষা করুন
ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করছেন কি না—জানুন
পরিশ্রম, মানসিক চাপ ও খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন
ঘাম যদি অস্বস্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
উপসংহার:
ঘাম কখনোই একেবারে ‘সাধারণ’ বিষয় নয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হলেও, মাত্রার অতিরিক্ত ঘাম আমাদের দেহে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার আগাম বার্তা হতে পারে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হন, সচেতন থাকুন।