জিমে হার্ট অ্যাটাক: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

জিমে হার্ট অ্যাটাক: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

জিমে ব্যায়াম করলে হার্ট অ্যাটাক হয় কেন?
শরীরচর্চা সুস্থ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত ব্যায়ামে হৃদ্‌পিণ্ড শক্তিশালী হয়, রক্তসঞ্চালন ভালো হয় এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে। কিন্তু অনেক সময় জিমে ব্যায়াম করতে গিয়ে কেউ কেউ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন—যা আমাদের আশঙ্কিত করে তোলে।

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের কারণ কী?
ব্যায়ামের সময় দেহের রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে হৃদ্‌পিণ্ডকে আরও জোরে কাজ করতে হয়। হৃদ্‌পিণ্ড নিজেও তখন বেশি রক্ত চায়। কিন্তু কারও হৃৎপিণ্ডে যদি আগে থেকেই কোনো রক্তপ্রবাহজনিত বাধা থাকে, তাহলে এই অতিরিক্ত চাপে হঠাৎ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তখনই ঘটে হৃদ্‌রোগ বা হার্ট অ্যাটাক।

বিশেষ করে ভারী ব্যায়াম বা হঠাৎ করে তীব্র ব্যায়াম শুরু করলে হৃদ্‌পিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে জিমেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?
নিচের কিছু শারীরিক ও জীবনধারাগত অবস্থা থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে:

পূর্বে হৃদ্‌পিণ্ডে সমস্যা থাকলে

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে

ধূমপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণকারীরা

নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক খেলে

পরিবারে হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থাকলে

শরীরে পানিশূন্যতা বা লবণের ঘাটতি থাকলে

অনেক সময় এসব সমস্যার উপসর্গ খুব স্পষ্ট হয় না। তাই নিজেকে ‘ফিট’ মনে করলেও আসলে ঝুঁকি থেকে যান অনেকেই।

কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
ব্যায়াম করা উচিত, তবে বুঝে-শুনে। বিশেষ করে যারা ভারী ও দ্রুত ব্যায়াম শুরু করতে চান, তাদের কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:

ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকে।

ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ান। হঠাৎ করে ইনটেন্স ওয়ার্কআউট নয়।

ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন অবশ্যই করুন।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংক এড়িয়ে চলুন।

শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখুন। ব্যায়ামের আগে, মাঝে এবং পরে পানি পান করুন।

অতিরিক্ত ঘাম হলে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক বা স্যালাইন পান করুন।

হাঁপ ধরলে, বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি হলে, মাথা ঘোরালে ব্যায়াম থামিয়ে দিন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জরুরি প্রস্তুতি 
যে জিমে ব্যায়াম করবেন, সেখানে যেন প্রশিক্ষিত ট্রেনার থাকেন, যিনি CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিতে পারেন। CPR জীবন বাঁচাতে পারে—এই স্কিল সবারই শেখা উচিত।

চিকিৎসক যদি বলেন আপনার হার্টের গতি খুব বেশি বাড়ানো উচিত নয়, তবে আপনি হার্ট রেট মনিটর করা যায় এমন রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন।

শরীরচর্চা যেমন উপকারী, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে বিপজ্জনকও হতে পারে—যদি আপনি অজান্তেই কোনো শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে ভারী ব্যায়ামে লিপ্ত হন। নিজের শরীরকে বোঝা, সঠিক পরামর্শ নেয়া এবং ধাপে ধাপে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ানো—এই বিষয়গুলো মেনে চললে জিমে গিয়ে হৃদ্‌রোগের ভয় ছাড়াই আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *