রক্তচাপের কোন মাত্রায় বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

রক্তচাপের কোন মাত্রায় বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

উচ্চ রক্তচাপ: কখন বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এবং করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন আজকের যুগে এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ এই রোগের জটিলতায় মারা যাচ্ছেন, যার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক অন্যতম প্রধান কারণ। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—অনেকেই জানেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ খুব কম বা কোনো দৃশ্যমান লক্ষণই দেখায় না।

উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে গড়ে ওঠে?

উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্ত শরীরের শিরা-ধমনীর মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করে। হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে রক্তনালির দেয়ালে চাপ পড়ে। সময়ের সাথে সাথে রক্তনালির প্রাচীর শক্ত হয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি বিকলের মতো প্রাণঘাতী অবস্থার জন্ম দেয়।

রক্তচাপের স্বাভাবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা

স্বাভাবিক রক্তচাপ: 120/80 মিমি এইচজি

প্রি-হাইপারটেনশন: সিস্টোলিক 130–139 / ডায়াস্টোলিক 80–89 মিমি এইচজি

হাইপারটেনশন (প্রথম ধাপ): 140/90 মিমি এইচজি বা তার বেশি

হাইপারটেনশন (দ্বিতীয় ধাপ): 160/100 মিমি এইচজি বা তার বেশি

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি রক্তচাপ 140/90 মিমি এইচজি অতিক্রম করে এবং দীর্ঘ সময় নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সম্পর্ক

উচ্চ রক্তচাপ হৃদয়ের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে, যা ধমনিতে চর্বি জমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে (এথেরোস্ক্লেরোসিস)। এর ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ধমনি ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ ও অস্বাভাবিক লক্ষণ

যদিও অনেক সময় কোনো উপসর্গ থাকে না, তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে—

তীব্র মাথাব্যথা

মাথা ঘোরা বা ভারী লাগা

চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা ঝাপসা দেখা

বুকে চাপ বা ব্যথা

নাক দিয়ে রক্তপাত

শ্বাসকষ্ট

বমি বমি ভাব

ঝুঁকির কারণগুলো

অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া

দীর্ঘ সময় বসে থাকা ও ব্যায়ামের অভাব

মানসিক চাপ

স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন

ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগ

বয়স ও বংশগত কারণ

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয়

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন – লবণ, তেল ও চিনি কমান, ফল ও সবজি বেশি খান।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন – প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা শারীরিক পরিশ্রম।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন – BMI 18.5–24.9-এর মধ্যে রাখুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।

স্ট্রেস কমান – মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শখের কাজ করুন।

নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন – অন্তত মাসে একবার, ঝুঁকিতে থাকলে সপ্তাহে একবার।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

ডা. [বিশেষজ্ঞের নাম], কার্ডিওলজিস্ট, বলেন—

“উচ্চ রক্তচাপ কোনো একদিনে তৈরি হয় না। এটি বছরের পর বছর জীবনধারার ভুলের ফলাফল। শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনলে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি বিকলের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *