দণ্ডবিধি আইন মনে রাখার সহজ উপায় ও প্রস্তুতির পরিকল্পনা

দণ্ডবিধি আইন মনে রাখার সহজ উপায় ও প্রস্তুতির পরিকল্পনা

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা:

দণ্ডবিধি বিষয়ে প্রস্তুতির কৌশল
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৮ জুন। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়তার উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ের পরামর্শ তুলে ধরা হচ্ছে। আজকের আলোচ্য বিষয়—দণ্ডবিধি, ১৮৬০। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় যেসব আইন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০। অপরাধ কী, কোন কাজ শাস্তিযোগ্য এবং শাস্তির পরিমাণ কত হবে—এই আইনে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। বিচারব্যবস্থার একটি মূল ভিত্তি হিসেবেই এই আইনটি বিবেচিত হয়।

প্রস্তুতিতে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবার মতো:
আইনের সংজ্ঞা অধ্যায় থেকে শুরু করুন
প্রত্যেক বছরই দণ্ডবিধির সংজ্ঞা অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। “অপরাধ”, “অবৈধ”, “অসদাচরণ”, “অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র” ইত্যাদি সংজ্ঞা শুধু মুখস্থ করলেই হবে না, সেগুলোর প্রয়োগও বুঝতে হবে।

দুটি প্রশ্ন, একটি উত্তর—তাই বেছে নেওয়ার বুদ্ধি দরকার
লিখিত পরীক্ষায় দণ্ডবিধি থেকে সাধারণত দুটি প্রশ্ন থাকে, যার মধ্যে যেকোনো একটি উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১৫। তাই প্রশ্ন বাছাইয়ের সময় নিজের আত্মবিশ্বাস ও প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রচনামূলক প্রশ্নে জোর দিন, সমস্যামূলক প্রশ্নকেও অবহেলা নয়
এবারের এমসিকিউ প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাখ্যাধর্মী বা বিশ্লেষণভিত্তিক প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই সম্ভাব্য রচনামূলক প্রশ্নগুলো নিয়ে অনুশীলন করুন। পাশাপাশি, ছোট ছোট ঘটনার ভিত্তিতে সমস্যামূলক প্রশ্নের সমাধান লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ধারা ও প্রয়োগ—উভয়ই জানতে হবে
শুধু ধারাগুলোর সংখ্যা বা নাম জানলেই হবে না, সংশ্লিষ্ট ধারা বাস্তব কোনো ঘটনার সঙ্গে কীভাবে প্রযোজ্য তা ব্যাখ্যা করতে পারাটাই আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

স্মরণীয় পরামর্শ:

দণ্ডবিধি আইনের আয়তন কিছুটা বড় হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি থাকলে সহজেই কাঙ্ক্ষিত নম্বর পাওয়া সম্ভব।

দণ্ডবিধি আইনের প্রস্তুতি: কোন ধারাগুলো পড়বেন, কীভাবে লিখবেন
আইনজীবী তালিকাভুক্তি, বিসিএস (জুডিশিয়াল) বা বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য দণ্ডবিধি আইন থেকে প্রশ্ন আসা নিশ্চিত। তাই ধারাভিত্তিক প্রস্তুতি ও লেখার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি। নিচে বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ ধারা এবং লেখার কৌশল তুলে ধরা হলো।

পরীক্ষায় যেসব ধারা গুরুত্ব পাবে
শাস্তি সংক্রান্ত ধারা:
ধারা: ৫৩, ৬৩, ৬৫, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭৩, ৭৪
দণ্ডের ধরন, জরিমানার সীমা ও বিকল্প শাস্তি নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে।

সাধারণ ব্যতিক্রম:
ধারা: ৭৬-৮৯, ৯২-৯৪, ৯৬-১০৬
আত্মরক্ষা, ভুল বিশ্বাস, অনুমতিসহ নানা ব্যতিক্রম পরিস্থিতিতে অপরাধ না হওয়ার ব্যাখ্যা জানতে হয়।

যৌথ দায় ও অপরাধে অংশগ্রহণ:
ধারা: ৩৪-৩৮, ১০৭-১২০, ১২০এ-১২০বি
সাধারণ অভিপ্রায়, সহযোগিতা, ষড়যন্ত্র এবং তার শাস্তি।

গণশান্তি বিরোধী অপরাধ:
ধারা: ১৪১-১৪৪, ১৪৬, ১৪৮, ১৪৯, ১৫৯-১৬০
অবৈধ সমাবেশ, দাঙ্গা, উসকানি ও মারামারি।

মিথ্যা সাক্ষ্য ও ন্যায়ের ব্যাঘাত:
ধারা: ১৯১-১৯৫, ১৯৭, ২০১, ২১১, ২১২, ২১৬A

হত্যা ও আত্মহত্যা:
ধারা: ২৯৯-৩০৯
হত্যা বনাম অপহত্যা, আত্মহত্যা প্ররোচনা।

আঘাত ও গুরুতর আঘাত:
ধারা: ৩১৯-৩২৬A, ৩৩৮A

অবৈধ আটক ও বাধা:
ধারা: ৩৩৯-৩৪৪

অপহরণ ও অপবহরণ:
ধারা: ৩৫৯-৩৬৩

ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ:
ধারা: ৩৭৫-৩৭৭

চুরি ও ডাকাতি:
চুরি: ৩৭৮-৩৮২

ডাকাতি ও দস্যুতা: ৩৯০-৩৯৬, ৩৯৯

আত্মসাৎ ও বিশ্বাসভঙ্গ:
সম্পত্তি আত্মসাৎ: ৪০৩, ৩০৭

বিশ্বাসভঙ্গ: ৪০৫-৪০৯

চোরাই মাল:
ধারা: ৪১০-৪১৩

প্রতারণা:
ধারা: ৪১৫, ৪১৬, ৪১৭, ৪১৯, ৪২০

জালিয়াতি:
ধারা: ৪৬৩-৪৬৫

মানহানি ও ভয় দেখানো:
ধারা: ৪৯৯, ৫০০, ৫০৩, ৫০৬, ৫১১

যেভাবে লিখবেন: পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার কৌশল
প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিন: প্রশ্নে কী জানতে চাওয়া হয়েছে, তা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি উত্তর না লিখে প্রথমে প্রাসঙ্গিক ধারা ও ব্যাখ্যার কাঠামো তৈরি করুন।

উদাহরণ ও কেস রেফারেন্স যুক্ত করুন:

যেমন: State vs. XYZ, AIR 1983 SC 409

উদাহরণ দিয়ে বাস্তব প্রেক্ষাপট বোঝালে নম্বর বাড়ে।

সমস্যাভিত্তিক প্রশ্ন হলে:

ঘটনার সংক্ষিপ্তসার লিখুন

প্রাসঙ্গিক ধারার বিশ্লেষণ করুন

নিজের মতামত বা পরামর্শ যুক্ত করুন

সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত টিকা লিখার সময়:

সংজ্ঞা ও মূল বক্তব্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন

নিজের ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার নেই

গঠনমূলক ও পরিপাটি লেখা:

অনুচ্ছেদ বিভাজন করুন

ধারার নম্বর স্পষ্টভাবে লিখুন

হাইলাইট বা আন্ডারলাইন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ আলাদা করুন

অতিরিক্ত পরামর্শ
মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে এমন ধারাগুলো আলাদা করে মুখস্থ করুন।

১ মাস থেকে ১ বছরের কম শাস্তিযুক্ত “ছোট ধারাগুলো” নিয়মিত পড়ুন—বহুবার সেখান থেকে প্রশ্ন আসে।

কাছাকাছি ধারার বিভ্রান্তি দূর করুন:

সাধারণ অভিপ্রায় vs. সাধারণ উদ্দেশ্য

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র vs. সহায়তা

ডাকাতি vs. দস্যুতা

অবৈধ বাধা vs. অবৈধ আটক

উপসংহার
দণ্ডবিধি আইন শুধু মুখস্থ করলেই হয় না, বুঝে পড়া এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করাটাই মূল চাবিকাঠি। আপনি যদি ধারার প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করে কেস রেফারেন্সসহ লিখতে পারেন, তাহলে যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই অংশে ভালো করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *