ঝাও লুসির রহস্যময় পোস্ট: ‘আমি শেষ’—আসলে কী ঘটেছে?

ঝাও লুসির রহস্যময় পোস্ট: ‘আমি শেষ’—আসলে কী ঘটেছে?

ঝাও লুসির জীবনের অন্ধকার অধ্যায়: শোষণ, প্রতারণা আর মানসিক লড়াই

আবারও আলোচনায় চীনা জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঝাও লুসি। ‘হিডেন লাভ’ নাটকের মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই তারকা এবার এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ধরেছেন—নিজের ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শোষণ, প্রতারণা ও অবহেলার অভিযোগ।

সম্প্রতি ঝাও তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে এক দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্টে জানান, তিনি বর্তমানে ভয়াবহ মানসিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। গুরুতর বিষণ্নতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত অবস্থাতেই তাঁর ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি কুয়ু মিডিয়া নানা অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে ২০ লাখ ইউয়ানের বেশি অর্থ আদায় করেছে। এমনকি নিজের গড়া স্টুডিও নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন আর তাঁর হাতে নেই।

 

অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি

অসুস্থতা আর ভেঙে পড়া ক্যারিয়ার
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসকের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, তিনি গুরুতর বিষণ্নতা ও উদ্বেগে ভুগছেন। এর ফলে তাঁকে বহু কাজ বাতিল করতে হয়, হাতছাড়া হয় গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড চুক্তিও।
প্রথমে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সব ধরনের সহায়তা করবে, কিন্তু পরে উল্টো সব চাপ এসে পড়ে ঝাওয়ের ওপর। তাঁর ভাষায়,

“আমার কাজ কমাতে হয়েছিল অসুস্থতার কারণে। ওরা বলেছিল পাশে থাকবে, কিন্তু শেষমেশ আমাকেই সব খেসারত দিতে হয়েছে।”

নিজের স্টুডিও নিয়েও তিনি এখন অসহায়। বহু চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে পারেননি, পুরোনো টিমের অনেক সদস্য ইতিমধ্যেই চলে গেছেন।

প্রতারণার ফাঁদে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি
ঝাওয়ের অভিযোগ, দুই বছর আগে অজান্তেই তাঁকে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সই করানো হয়। এই চুক্তির সুযোগ নিয়ে তাঁর স্টুডিও থেকে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ ইউয়ান তোলা হয়, কোনো আলোচনা ছাড়াই। আরও চমকপ্রদ অভিযোগ—তাঁর অর্থ ব্যবস্থাপককে নকল আয়ের নথিতে সই করানো হয়েছে। চুক্তি ভাঙার চেষ্টা করতেই প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে ভয় দেখায় যে, মুখ খুললে বিনোদন জগতে তাঁকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে।

গ্যালাক্সি কুয়ু মিডিয়ার কথিত হুমকি সম্পর্কে ঝাও বলেছেন,

“আমাকে বলা হয়েছিল, চুপ থাকাটাই ভালো। কথা বললে আমাকে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হতে পারে। এটা কেমন সমাধান?”

প্রমাণ হাতে নিয়ে সরব হওয়া
শুধু মুখের অভিযোগেই থেমে থাকেননি ঝাও। নিজের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ করে তিনি জানান, ১৬ জুলাই ২০২৫ সালে জিউজিয়াং শহরের এক মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করান। রিপোর্টে দেখা যায়, তাঁর উদ্বেগের স্কোর ৭৩, যা ক্লিনিক্যাল মানদণ্ডে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই মানসিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি—ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি এবং অবিরাম মানসিক চাপ তাঁকে এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা
পোস্টের শেষে ঝাও ভক্ত এবং সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেন,

“আমার ভেতরটা পচে গেছে, আর আমার কোনো সম্মান নেই। কিন্তু আমাকে ব্ল্যাকলিস্ট করার দরকার নেই, আমি নিজের ইচ্ছাতেই থেমে যাচ্ছি। আমি শেষ।”

তিনি আফসোস করে যোগ করেন,

“যদি তখনই পুলিশের কাছে যেতাম, যদি সেই বছরই অভিযোগ করতাম, আজ আর কেউ এই অন্যায়কে ‘আইনি’ বলে চালাতে পারত না।”

তারপরই তিনি পরামর্শ দেন,

“যদি কখনো বিপদে পড়েন, দয়া করে কারও মিষ্টি কথায় ভুলবেন না। অনেক সময় সেই কথার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে প্রতারণা। ভয় পাবেন না—সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে যান, দেরি না করে অভিযোগ জানান।”

ঝাও লুসির এই অভিযোগ এখন চীনা বিনোদন জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভক্তরা তাঁর পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও প্রশ্ন উঠছে—একজন সফল তারকাকে কি সত্যিই এভাবে আটকে রাখা যায়? আর যদি যায়, তাহলে সাধারণ শিল্পীদের অবস্থাই বা কতটা নাজুক?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *