ভারত বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: সম্ভাব্য একাদশ একনজরে

ভারত বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: সম্ভাব্য একাদশ একনজরে

শিয়া কাপ ফাইনাল: ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ ও ম্যাচ পূর্বাভাস

এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী—ভারত ও পাকিস্তান। দীর্ঘদিন ধরেই দুই দলের ম্যাচ মানেই ভিন্ন রকম উত্তেজনা, আর সেটা যদি ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে হয়, তাহলে তো প্রত্যাশার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া এই ম্যাচে কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর দৃষ্টি থাকবে মাঠের প্রতিটি বলের দিকে।

কাগজে–কলমে শক্তিমত্তায় ভারত এগিয়ে। ব্যাটিং লাইনআপে শুবমান গিল, সূর্যকুমার যাদব ও অভিষেক শর্মার মতো ফর্মে থাকা ব্যাটাররা আছেন। পাশাপাশি বোলিং আক্রমণে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাহ। তবে পাকিস্তানকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ইতিহাস সাক্ষী, তারা বারবার বড় মঞ্চে নিজেদের নতুনভাবে প্রমাণ করেছে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাছাড়া ১৯৯২ বিশ্বকাপ কিংবা ২০০৯ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে পাকিস্তান অঘটন ঘটাতে অভ্যস্ত।

পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ

ফাইনালে পাকিস্তান দলে বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ ম্যাচে যে একাদশ খেলেছিল, সেই একই দল নিয়েই মাঠে নামতে পারে তারা। ওপেনিংয়ে দেখা যাবে সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানকে। ফখরের অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের জন্য বড় সম্পদ, যদিও ধারাবাহিকতার অভাব ভুগছে দল।

তিন নম্বরে খেলতে পারেন সাইম আইয়ুব। এশিয়া কাপে একেবারেই ফর্মে নেই তিনি—৬ ম্যাচে মাত্র ২৩ রান। তারপরও তার স্পিন খেলার দক্ষতা ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার কারণে সুযোগ পেতে পারেন। চার নম্বরে নামতে পারেন অধিনায়ক সালমান আগা, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং অর্ডারে ভিন্নতা আসতে পারে। হুসেইন তালাত ও মোহাম্মদ হারিস দলের মিডল অর্ডারের ভরসা।

লোয়ার অর্ডারে পাকিস্তানের আসল শক্তি। শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ নেওয়াজ ও হারিসরা আগের ম্যাচে প্রমাণ করেছেন, প্রয়োজনে তারাও ব্যাট হাতে অবদান রাখতে পারেন। বোলিং বিভাগে নেতৃত্ব দেবেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। তাকে সাপোর্ট করবেন হারিস রউফ ও ফাহিম আশরাফ। স্পিনে আছেন আবরার আহমেদ, যিনি এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে চমৎকার ইকোনমি রেটে বল করেছেন। তার সঙ্গে আছেন নেওয়াজ ও সাইম আইয়ুব।

পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ: সালমান আগা (অধিনায়ক), সাহিবজাদা ফারহান, ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, হুসেইন তালাত, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটকিপার), মোহাম্মদ নেওয়াজ, আবরার আহমেদ, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, শাহিন শাহ আফ্রিদি।

ভারতের সম্ভাব্য একাদশ

অন্যদিকে ভারতের একাদশে আসতে পারে কিছু পরিবর্তন। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন যশপ্রীত বুমরাহ। ফাইনালে তিনি ফিরবেন নিশ্চিতভাবেই। অলরাউন্ডার শিবম দুবে দলে ফিরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন অর্শদীপ সিং কিংবা হর্ষিত রানা। তবে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো হার্দিক পান্ডিয়ার চোট। তিনি না খেলতে পারলে ভারতের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।

ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে শুরুর দায়িত্বে থাকবেন অভিষেক শর্মা ও শুবমান গিল। এই জুটি টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো শুরু এনে দিয়েছে। তিন নম্বরে সূর্যকুমার যাদব, যিনি নেতৃত্বও দিচ্ছেন। তার সঙ্গে মিডল অর্ডারে থাকবেন তরুণ তিলক বর্মা ও সঞ্জু স্যামসন।

অলরাউন্ডার হিসেবে থাকবেন অক্ষর প্যাটেল ও শিবম দুবে। স্পিন বিভাগে ভরসা বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব। ভারতের স্পিন আক্রমণ সবসময়ই শক্তিশালী, আর দুবাইয়ের উইকেটে তারা কার্যকর হতে পারেন। পেস আক্রমণে বুমরাহর সঙ্গে খেলবেন হয়তো অর্শদীপ বা হর্ষিত।

ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: অভিষেক শর্মা, শুবমান গিল, সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), তিলক বর্মা, সঞ্জু স্যামসন (উইকেটকিপার), হার্দিক পান্ডিয়া/অর্শদীপ সিং, অক্ষর প্যাটেল, শিবম দুবে, কুলদীপ যাদব, যশপ্রীত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী।

ম্যাচ পূর্বাভাস

এই ম্যাচে দু’দলই ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। ভারতের শক্তিশালী ওপেনিং জুটি থাকলেও মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতা নেই। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা—শুরুর দিকে দ্রুত উইকেট হারালে চাপ তৈরি হয়। তবে দুই দলের বোলিং আক্রমণই ফাইনালের ফল নির্ধারণ করতে পারে।

ভারত চাইবে বুমরাহ ও কুলদীপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে। অন্যদিকে পাকিস্তান নির্ভর করবে আফ্রিদির নতুন বলে দাপট আর আবরারের ঘূর্ণির ওপর। সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব অপেক্ষা করছে এক মহারণের, যা নিঃসন্দেহে এশিয়া কাপের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *