পাহাড়ের সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই অধিকার কমিটি

পাহাড়ের সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেই অধিকার কমিটি

পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরাতে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

পাহাড়ে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্ষণ ও হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সংগঠনটির অভিযোগ, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো প্রকার সংবেদনশীলতা বা দায়িত্বশীল আচরণ করছে না।

রোববার রাজধানীর পরিবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সাধারণ সভায় এ অভিযোগ করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে আদিবাসী জনগণের ওপর হামলা এবং শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের ন্যায্য আন্দোলনে হামলা চালিয়ে আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার এবং পরে বিভিন্ন পাড়ায় হামলার ঘটনা শুধু গণতান্ত্রিক পরিবেশকেই ধ্বংস করছে না, বরং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ও হামলার ঘটনা

সভায় আলোচিত হয় যে, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক মারমা শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। এর পরপরই ২৭ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে, যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করেছে। ১৪৪ ধারা ঘোষণার পর বিভিন্ন পাহাড়ি পাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটে, ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয় এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কে পড়ে।

সরকারের প্রতি সমালোচনা

সভায় বক্তারা বলেন, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে বোঝা যায় তারা সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—মাজার, মন্দির, গির্জা কিংবা মসজিদ—কোনোটিই নিরাপদ নয় বলেও সভায় অভিযোগ করা হয়। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, মানুষের ধর্ম, মত প্রকাশ ও চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়িতে যাচ্ছে

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, খাগড়াছড়িতে সংঘটিত ধর্ষণ ও হামলার ঘটনাগুলো তদন্ত করার লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধিদল সেখানে পাঠানো হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবারই প্রতিনিধিদলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবে। এছাড়া আগামী ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা আয়োজনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।

জাতীয় প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ

সভায় শুধু পাহাড় নয়, সমতল অঞ্চলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ধর্ষণ, হামলা, জবরদস্তি, ভাঙচুর—এসব ঘটনা দেশে নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির, অনেক ক্ষেত্রেই বিচারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে। অধিকার কমিটি মনে করে, এ অবস্থার অবসান না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি ভেঙে পড়বে।

বক্তাদের উপস্থিতি

সভায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের নামে যদি জনগণের কণ্ঠ দমন করা হয়, তাহলে এটি কোনো গণতন্ত্র নয়।’’ চিকিৎসক হারুন উর রশীদ মনে করেন, ‘‘ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।’’ গবেষক মাহতাব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না হলে পাহাড়-সমতল উভয় জায়গায় সংঘাত বাড়বে।’’ এছাড়া রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ, সংস্কৃতিকর্মী একরাম হোসেন, নির্মাতা সজীব তানভীর ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা রাফিকুজ্জামান ফরিদসহ অন্য বক্তারাও সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন।

সমাপনী আহ্বান

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বলা হয়, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। পাহাড়ে মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। অথচ সেই দায়িত্ব পালনে সরকারের অনীহা দৃশ্যমান। অধিকার কমিটি জোর দাবি জানায়, পাহাড়ে হামলা-ধর্ষণসহ সব অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *