পুষ্টিগুণে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে নুডলস?

পুষ্টিগুণে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে নুডলস

নুডলস: মুখরোচক খাবার, নাকি পুষ্টির ঘাটতি?

ঝটপট ক্ষুধা মেটাতে নুডলস এখন প্রায় সবার ঘরেই নিয়মিত অতিথি। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে বা সন্ধ্যায় টিফিনে—এক প্যাকেট নুডলসই যেন সহজ সমাধান। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা নুডলস খেতে যেমন মজা, তেমনি এটি তৈরি করাও অত্যন্ত সহজ। কিন্তু এই জনপ্রিয় খাবারটি শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

নুডলসের মূল উপাদান

নুডলস মূলত গমের ময়দা থেকে তৈরি, তাই এটি একটি শর্করাজাতীয় খাবার। শরীরে শক্তি জোগানোর মূল উৎস হলো শর্করা, তাই নুডলস থেকেও শক্তি পাওয়া যায়। তবে শুধু শক্তি পাওয়াই যথেষ্ট নয়—একটি খাবারের পুষ্টিগুণ নির্ভর করে তাতে কতটা আমিষ (প্রোটিন), স্নেহপদার্থ (চর্বি), আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ আছে তার ওপর।

সাধারণ ইনস্ট্যান্ট নুডলসে এই অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানগুলো তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাই এটি খেয়ে পেট ভরলেও শরীর যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে, তা বলা যায় না।

 পুষ্টিমান বাড়ানোর উপায়

ভালো খবর হলো—নুডলসের পুষ্টিগুণ আপনি নিজেই বাড়াতে পারেন। কীভাবে?

ডিম, মুরগির মাংস বা টোফু যোগ করুন: এতে প্রোটিন যোগ হবে, যা পেশি ও কোষের গঠন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

বিভিন্ন রঙের সবজি ব্যবহার করুন: যেমন গাজর, শিম, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ইত্যাদি। এতে শরীর পাবে ভিটামিন এ, সি, বি-কমপ্লেক্স এবং নানা খনিজ উপাদান।

সবজির অনুপাত বাড়ান: এক প্লেট নুডলসে যদি অর্ধেকই সবজি থাকে, তাহলে সেটি হয়ে উঠবে অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ খাবার।

বাদাম বা তিল যোগ করুন: এগুলো থেকে ভালো চর্বি ও আঁশ পাওয়া যায়।

এইভাবে তৈরি করা নুডলস শুধু মুখরোচকই নয়, বরং শরীরের জন্যও তুলনামূলকভাবে উপকারী।

 ক্যালরি ও তেলের হিসাব

রান্না করা ১০০ গ্রাম নুডলসে প্রায় ১০০ থেকে ১৪০ ক্যালরি পাওয়া যায়। এটি দেখতে কম মনে হলেও, রান্নায় ব্যবহৃত তেল, সস বা কেচাপ যুক্ত হলে ক্যালরির পরিমাণ দ্বিগুণও হতে পারে। বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য এই হিসাব জানা জরুরি।

তেলের পরিমাণ যত বাড়বে, ক্যালরির মাত্রাও তত বেড়ে যাবে। আবার টমেটো সস, চিলি সস বা কেচাপে অতিরিক্ত চিনি ও সোডিয়াম থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সাদা সস বা ক্রিমজাত উপকরণ যোগ করলে ফ্যাটের পরিমাণ আরও বাড়ে।

কোন তেল সবচেয়ে উপযোগী?

তেলের ধরন নুডলসের স্বাস্থ্যমান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অলিভ অয়েল, রাইস ব্র্যান অয়েল, সূর্যমুখী তেল বা ক্যানোলা তেল তুলনামূলকভাবে ভালো বিকল্প।

সয়াবিন তেল ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে পরিমাণে সীমিত রাখা উচিত।

পাম তেল, ডালডা, ঘি বা মাখন ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—একই তেল বারবার ব্যবহার করবেন না। ব্যবহৃত তেল পুনর্ব্যবহার করলে তা থেকে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এমএসজি বা টেস্টিং সল্ট: স্বাদের ফাঁদ

অনেক ইনস্ট্যান্ট নুডলসে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) নামে একটি উপাদান থাকে, যা খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এমএসজি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, হজমে সমস্যা এবং কখনো কখনো অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব এই উপকরণটি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

 আঁশের অভাব ও তার প্রভাব

নুডলসের বড় সীমাবদ্ধতা হলো এতে আঁশের পরিমাণ কম। আঁশ বা ফাইবার হজমপ্রক্রিয়া ভালো রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু নুডলস খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ক্ষুধা ফিরে আসে। এই সমস্যা কাটাতে নুডলসে বেশি করে সবজি যোগ করা উচিত। সবজির আঁশ হজমে সহায়তা করে ও শরীরের জন্যও উপকারী।

সঠিক সময় ও পরিমাণে খাওয়া

নুডলস খাওয়ার সময় ও পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ।
সকালে বা দুপুরে মূল খাবারের বিকল্প হিসেবে সবজি ও প্রোটিন মিশিয়ে নুডলস খাওয়া যেতে পারে।
সন্ধ্যায় নাশতা হিসেবে খেলে, রাতে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা কিছু (যেমন দুধ বা ফল) খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন নুডলস না খেয়ে সপ্তাহে এক-দুবার খাওয়াই যথেষ্ট।

অতিরিক্ত নুডলস খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালরির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধি ও অন্যান্য বিপাকজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

হোল গ্রেইন নুডলস: স্বাস্থ্যকর বিকল্প

সব নুডলস একরকম নয়। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় হোল গ্রেইন বা গোটা শস্যের তৈরি নুডলস, যেখানে আঁশ, ভিটামিন বি ও খনিজ উপাদান তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এই ধরনের নুডলস ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি দেয়।
তবে বাংলাদেশের বাজারে এখনো এই হোল গ্রেইন নুডলস খুব বেশি সহজলভ্য নয়। তবু স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতারা চাইলে অনলাইন বা বড় সুপারস্টোর থেকে এটি সংগ্রহ করতে পারেন।

 শেষ কথা

নুডলস একেবারে পুষ্টিহীন নয়, আবার খুব স্বাস্থ্যকরও নয়—সবকিছু নির্ভর করে কীভাবে ও কতটা সচেতনভাবে আপনি এটি তৈরি ও খাচ্ছেন তার ওপর।
সঠিক উপকরণ, পরিমিত তেল ও পর্যাপ্ত সবজি ব্যবহার করে নুডলসকে সহজেই একবেলার পুষ্টিকর খাবারে পরিণত করা সম্ভব। তবে ইনস্ট্যান্ট নুডলসের প্যাকেট খুলে শুধু গরম পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া শরীরের কোনো উপকারে আসে না—বরং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে।

তাই বলা যায়,
নুডলস খাওয়া দোষের নয়, কিন্তু ভেবে খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *